পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য রিপনের ১২০৯ কোটি টাকা ঋণের কী হবে

পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য রিপনের ১২০৯ কোটি টাকা ঋণের কী হবে

প্রকাশিত: ৯:০৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার আগে পর্যন্ত বেশ দাপুটে সংসদ সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। এলাকায় বেশ জনপ্রিয়ও ছিলেন।

৫ আগস্টে মাহমুদ হাসান রিপন আত্মগোপনে যাওয়ার পর ঋণ খেলাপিসহ একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তাঁকে নিয়ে নিজ এলাকায় নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি-সাঘাটা উপজেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,মাহমুদ হাসান রিপন এলাকায় উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার দুই তৃতীয়াংশ চরাঞ্চল।

এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেকটা অনুন্নত। শুকনা মৌসুমে চারদিকে ধু ধু বালুচর। বর্ষা মৌসুমে থইথই পানি। কৃষি,শিক্ষা,অবকাঠামো উন্নয়নে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে অনেক পিছিয়ে ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা। এলাকার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখাতেন রিপন। তিনি এখন পলাতক। তিনি একাই ১ হাজার ২০৯ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছেন। আসনটিতে দীর্ঘদিন এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের ফজলে রাব্বী। মাহমুদ হাসান রিপন আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি দিতেন।

ফজলে রাব্বীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হন রিপন। ছয় মাসের অল্প সময়ে এমপি হয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়নের বাজেট পেয়েছেন বলে এলাকায় বলে বেড়াতেন।

কাজগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আবারও বিজয়ী হন তিনি। কিন্তু কোনোটাই বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এলাকায় সব ভোটারকেই নিজের কর্মী বানিয়েছিলেন। ভোটের জন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে সরকারি কর্তাদেরও মাঠে নামিয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে জানা যায়, নির্ভরশীল ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের এসএম ¯িপনিং মিলস লিমিটেডে ১ শতাংশ, এসএম নিটওয়্যারস লিমিটেডে ২ দশমিক ৪৮ এবং মায়ার লিমিটেডে ৬৫ শতাংশ শেয়ার দেখিয়ে মাহমুদ হাসান রিপন ইসলামী ব্যাংক থেকে ৭ কোটি ৯৬ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬২৮ টাকা, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে ২০ কোটি ২ লক্ষ ৩১ হাজার ৯৩৮, ডাচ্বাংলা ব্যাংকে ৩৭৩ কোটি ১০ লক্ষ ২৬ হাজার ৭৬৪, ইস্টার্ন ব্যাংকে ২০৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৪ হাজার ৯৪৫, যমুনা ব্যাংকে ৩০ কোটি ৮৭ লক্ষ ৫৪ হাজার ৭৭১, সিটি ব্যাংকে ৪৯ কোটি ৫ লক্ষ ১১ হাজার ৫৪৩, ব্যাংক এশিয়ায় ৭২ কোটি ৯ লক্ষ ১৩ হাজার ৮৯০, র্ব্যাক ব্যাংকে ৭৮ কোটি ৮০ লক্ষ ২৭ হাজার ৪৭৬ টাকা ঋণ নিয়েছেন।

এছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান,ম্যানেজিং ডিরেক্টর বা ডিরেক্টর হওয়ার সুবাদে এসএম ¯িপনিং মিলস লিমিটেডের ৩ শতাংশের শেয়ারহোল্ডার দেখিয়ে, ইস্টার্ন ব্যাংক ৬১ কোটি ৪০ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯৭৩ টাকা, সিটি ব্যাংকে ৪৯ কোটি ৫ লক্ষ ১১ হাজার ৫৪৩, ব্র্যাক ব্যাংকে ৭৮ কোটি ৮০ লক্ষ ২৭ হাজার ৪৭৬, ব্যাংক এশিয়া ৭২ কোটি ৯ লক্ষ ১৩ হাজার ৮৯০, ডাচ্বাংলা ব্যাংক ১০৩ কোটি ৯৭ লক্ষ ২৫২ টাকা ঋণ গ্রহণ করে রিপন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে শীর্ষ ১০ ঋণ ও দায়গ্রস্ত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেছে। এর মধ্য সর্বোচ্চ ঋণগ্রস্ত প্রার্থী এস এ কে একরামুজ্জামান। তাঁর ঋণ ও দায় ২ হাজার ৫৩৭ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা।

আর মাহমুদ হাসান রিপনের ঋণ ও দায় ১ হাজার ২০৯ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা একরামুজ্জামান আবার মাহমুদ হাসান রিপনের শ্বশুর। হাসিনা সরকারের পতনের পর মাহমুদ হাসানও আত্মগোপনে গেছেন। এখন এসব ঋণ আদায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

আত্মগোপনে গেলেও মাহমুদ হাসান রিপন ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী তারেক ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা যায়। তবে তাঁরা কেউই এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

মাহমুদ হাসান রিপনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বলেন, নিজেরাই বিপদে আছেন। নেতাকর্মীদের রেখে এভাবে তিনি পালিয়ে যাবেন, তা তাঁরা ভাবতে পারেননি।

ঋণ ও দায় বিষয়ে তাঁরা বলেন, এসব তাঁর ব্যক্তিগত। তাঁর অপরাধের দায় কেন তাঁরা কেন নেবেন! গাইবান্ধা জেলার আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারাও আত্মগোপনে আছেন। ফলে তাঁদের সঙ্গেও কথা সম্ভব হয়নি।