আবু সাঈদের পরিবারকে বেরোবির আর্থিক সহায়তা প্রদান

প্রকাশিত: ৬:১১ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২৪

বর্তমান খবর,রংপুর ব্যুরো: সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসময় পরিবারের একজনকে চাকরি দেয়ারও প্রতিশ্রæতি দেয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশণা দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, আজ ২৬ জুলাই শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিহত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এটি প্রতিনিধি দল সাড়ে সাত লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রক্টর শরিফুল ইসলাম,বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক সমিতির সাধারণ স¤পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ, কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিরোজুল ইসলাম।

বিশ্ববিদ্যালযের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম বলেন, ভিসি ড. হাসিবুর রশিদের নির্দেশে সাঈদের মা-বাবার হাতে আমরা এই আর্থিক সহায়তা তুলে দিয়েছি। সাঈদের মা-বাবার সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখছে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন। ভিসি নিজেও সাঈদের পরিবারের খোঁজ রাখছেন,পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। এছাড়াও পরিবারের একজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ স¤পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল বলেন, সাঈদের মৃত্যুও ঘটনায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় গভীরভাবে দুঃখিত। আমরা সাঈদের মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যাকান্ড হিসেবে দাবি করে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাঈদের পরিবারের ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে না। কিন্তু তাদের পাশে সব সময় থাকবে। শিক্ষকরা থাকবেন।

আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর আগে আরেকদিন আমাদের সাথে দেখা করতে আসে। ওই সময় ভিসি আমার সাথে মোবাইলে কথা বলেন। আমাদের খোঁজ খবর নেন। আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দেন। আমি বলেছিলাম আমাদের পরিবারের একজনকে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়া হয়।

ভিসি আশ্বস্ত করেছেন। সন্তানকে তো আর ফিরে পাবো না। আমাদের পরিবারের একজনকে একটা চাকরি দিলে আমরা হয়তো একটু ভালোভাবে চলতে পারব শেষ সময়ে।

সাঈদের বাবা বলেন, আবু সাঈদকে পড়ালেখার টাকা দিতে পারতাম না। তার প্রাইভেট পড়ানোর জমানো টাকায় চলতাম আমরা। অথচ সেই সন্তান নেই। বাবা হয়ে সন্তানের কফিন কাঁধে নেয়ার ভাষা আমার নেই। আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন, দেশের মানুষের জন্য সে জীবন দিয়েছে। আল্লাহ যেন তাকে মাফ করে দেয়।

প্রসঙ্গত,মঙ্গলবার তখন দুপুর পৌনে ২টা। পুলিশ কোটা আন্দোলনকালীদের ছত্রভঙ্গ করতে ছুড়ছে গুলি, টিয়ারশেল। আর ছাত্রলীগ হেলমেট পড়ে মুখে গামছা বেধে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ধাওয়া দিচ্ছে। এমন মুহূর্তেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে দাড়িয়ে আন্দোলনকারীদের নেতা আবু সাঈদ পুলিশ এবং ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্যে করে বলে আপনারা আমার ভাই-বোনের ওপর আর গুলি ছুড়বেন না। ওদের মারবেন না। এরপর দুই হাতে তুলে বলে আপনারা আমাকে গুলি করেন, তবুও ওদেরকে গুলি করবেন না। সাথে সাথে ১ নম্বর গেট থেকে পুলিশ তার বুক বরাবর কয়েক রাউন্ড রাবারবুলেট ছোড়ে। তারপরও কিছুটা সময় দাড়িয়ে থাকে সাঈদ। পরে সামান্য দূরে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সাঈদ।

শিক্ষার্থীরা তাকে দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।