বর্তমান খবর,বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চড়া দামে অপরিপক্ব তরমুজ কিনে ঠকছেন ক্রেতারা। চৈত্র মাসের ভ্যাপসা গরমের মধ্যে রোজায় রসালো ফলটির চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় আড়তে অপরিপক্ব তরমুজ সরবরাহ করছেন বিক্রেতারা। কম দামে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকের কাছ থেকে সংগৃহীত এসব অপরিপক্ব তরমুজ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন আড়তদাররা। এতে ব্যবসায়ীরা লাভ গুনলেও বাড়ি নিয়ে কাটার পর লালের বদলে তরমুজের ভেতরের রং সাদা দেখে হতাশ হচ্ছেন ক্রেতারা।
গরম ও রোজায় তরমুজের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী হবে এমনটি আঁচ করতে পেরে আড়তে তরমুজ তোলেন বীরগঞ্জ উপজেলার ব্যবসায়ীরা। পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও দিনাজপুর আড়তে থেকে তরমুজ নিয়ে আসেন ফড়িয়ারা। নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশনের বিনিময়ে আড়তদাররা এসব তরমুজ পিস হিসেব খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে একদম ছোট আকৃতির ১০০ পিস তরমুজ ১২ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। এসব তরমুজের একেকটির ওজন তিন কেজির ওপর। মাঝারি আকৃতির তরমুজের ১০০টির দাম ১৫-২০ হাজার। আকার ভেদে প্রতিটির ওজন ৩-৪ কেজি। আড়তে সবচেয়ে বড় আকৃতির ৮-১০ কেজি ওজনের তরমুজের দাম ২৫০-৩০০ টাকা।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম বলেন, চারা রোপণের ৬০-৬৫ দিন পর তরমুজ পরিপক্ব হয়। এর আগে তরমুজ তোলা হলে সেগুলো পুরোপুরি পাকে না। ভেতরে লাল ও সাদা মিলিয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, তরমুজ কেনার সময় চাপ দিয়ে দেখতে হয় ‘ঢ্যাপ ঢ্যাপ’ শব্দ হয় কি না। যেসব তরমুজের খোসার ওপর মসৃণ ও রং উজ্জল থাকে সেগুলো সাধারণত পাকা হয় না। আর যেসব তরমুজ গোলাকৃতি, সেগুলো বেশি মিষ্টি।
শ্রমজীবী সিদ্দিক হোসেন জানান, ইফতারিতে খাওয়ার জন্য বীরগঞ্জ পৌরশহরের মহাসড়কের পাশে থেকে কেজি দরে ৪০০ টাকা দিয়ে একটি তরমুজ কেনেন। পরে বাড়ি নিয়ে গিয়ে কেটে দেখেন ভেতরে বেশিরভাগই কাঁচা। তরমুজের বিচিগুলোও অপরিপক্ব। তরমুজ ব্যবসায়ীরা বলছেন ট্রাকভাড়া এক লাফে দ্বিগুণ, আরও বাড়তে পারে তরমুজের দাম। তিনি আরও বলেন,গোটা তরমুজ নিতে হলে ৫ কেজি ওজন হবে। পবিত্র মাহে রমজানে নিম্ন আয়ের মানুষেরা তরমুজ কিনতে পারছে না খেজুরের মতো বেড়েছে তরমুজের দামও। বছরের অন্যান্য সময় তরমুজ ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা করে।
ফলের দোকান ও আড়ত ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরুতে তরমুজ বিক্রি বেশি হলেও এখন ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। বেশি দামের কারণে একমাত্র সামর্থ্যবানরা ছাড়া সব শ্রেণির ক্রেতারা তরমুজ কিনছেন না। এতে তাদের ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দিয়েছে।
বিজয় চত্বরে ফল ব্যবসায়ী আতিয়ার বলেন, দিনাজপুর শহরের রস্তম এর আড়ত থেকে ১২ শত থেকে ২ হাজার টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ১০ মণ তরমুজ এনে। হঠাৎ বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
বড় আকৃতির তরমুজ কিনে তাদের এখানকার অনেক আড়ত ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। খুচরা বাজারে বিক্রি না হওয়ায় সেসব তরমুজ আড়তে পড়ে আছে। তরমুজ পচনশীল। আরও কিছুদিন এভাবে পড়ে থাকলে পচে নষ্ট হয়ে যাবে। খুচরা ব্যবসায়ীরা কেজি দরে বিক্রি করায় তরমুজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এতে ব্যবসায়ে এখন খারাপ প্রভাব পড়ছে।
ফল ব্যবসায়ী সজিব বলেন, খুচরা বিক্রেতারা তরমুজ কিনতে এখানে ভিড় করছেন। পুরোপুরি পাকা না হলেও তারা তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা তরমুজ বিক্রি করেন। এক্ষেত্রে তারা দায়ী না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে এলাহী বলেন, অপরিপক্ক তরমুজ বিক্রি একদম অন্যায়। মনিটরিং করে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।