বর্তমান খবর,মেহেরপুর প্রতিনিধি: এমন অনেকেই আছেন, যারা জীবনটাকে এগিয়ে নিচ্ছেন প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে। তারা প্রতিকূলতা বা প্রতিবন্ধকতা জয় করে পৌঁছে গেছেন সাফল্যের চূড়ায়। এমনই একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আকরামুল ইসলাম। তিনি প্রচÐ ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন। দু’টি চোখ না থাকলেও তার কোন অভিযোগ নেই। নিজের পাশাপাশি গোটা পরিবারের দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। তবে এখনও কোন বিত্তবান এগিয়ে আসেনি তাকে সহায়তা করতে। আর সমাজ সেবা দপ্তর বলছে, তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।
আকরামুল হোসেন। বাড়ি মেহেরপুরের গাংনীর বাওট গ্রামে। পাঁচ ভায়ের মধ্যে আকরামুল তৃত্বীয়। তার বয়স যখন তিন, তখন নানা রোগে ্আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। শিশুকালে দু চোখের আলো নিভে গেলেও হার মানে নি আকরামুল। দিব্যি সংসারের যাবতীয় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে অন্ধত্ব বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সেই ছোট্টকালে বাবার হাতের কাজ উপলব্ধি করতে পেরে সে বিদ্যা কাজে লাগিয়ে চারজনের সংসারের ব্যায়ভার বহন করছেন তিনি।
আকরামুল ইসলাম জানান, সংসারের অন্যান্য কাজ সাধারণ সুস্থ সবল মানুষের মতোই নিজ হাতে করেন তিনি। নিজেই দোকান থেকে জিনিষপত্র কেনাকাটা করে থাকেন। ছোট কালে বাবার কাছ থেকে সব কাজের হাতেখড়ি তার। প্রথমে তার বাবাই কিভাবে বাঁশ কঞ্চি কেটে কাজ করতে হয় সেটা রপ্ত করিয়েছেন। এখন কারো সাহায্য ছাড়াই কাজ করেন তিনি। বাঁশ ও কঞ্চি কেটে ঝুড়ি তৈরী নয়, গাছে উঠে নারকেল পেড়ে আনা, পুকুরে নেমে মাছ ধরাসহ যাবতীয় কাজ এখন তার করায়ত্বে।
আকরামুলের মা ছানোয়ারা খাতুন জানান, খুব ছোট বেলা আকরামুলের হাম জ¦র ও পেটে ব্যাথা হওয়ার পর চোখ মেলতে পারতোনা সে। পরে আর চোখে দেখতে পারে না। সে তার বাবার কাছ থেকে কাজ শিখেছে। সংসারে চার জন লোক। হাতের কাজ করে এদের দুমুঠো আহারের ব্যবস্থা করে আকরামুল। সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
বড়ভাই আনারুল ইসলাম জানান,বাল্য বয়স থেকে আকরামুল মেধাবি। অনুখে তার দুচোখ অন্ধ হলেও সাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে সে। কোন কাজ একটু হাতে ধরিয়ে দিলেই অনায়াসে করতে পারে। তবে তার সংসারের ব্যায়ভার বহন করা বেশ কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া তার কপালে জোটেনি কোন সরকারী সহযোগিতা।
আকরামুলের স্ত্রী শাহারবানু জানান, অন্ধ মানুষকে বিয়ে করলেও এখন সেই মানুষটিকে নিয়ে গর্ব হয়। সংসারের খরচ যোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তার। একটি ঝুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। সরকার যদি একটা ঘরের ব্যবস্থা করতো তাহলে পরিবারটি একটি আশ্রয় পেতো বলে জানান তিনি।
গাংনী উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আরশাদ আলী জানান, আকরামুলের ঘটনাটি শুনেছেন। তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিক্ষা বা কোন খারাপ কাজ না করে আকরামুলের মতো স্মার্ট হওয়ার আহবান জানান তিনি।