বর্তমান খবর,শেরপুর প্রতিনিধি: লাশ চুরির আতঙ্কে ভুগছেন শেরপুরের মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা। এ থেকে বাঁচতে কবরস্থানের ওপরে দেয়া হচ্ছে লোহার গ্রিল। স্বজনদের দাবি, মরার পরে যেন তারা তাদের স্বজনদের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু ধরে রাখতে পারেন,এ জন্যই নেয়া হচ্ছে এমন পদক্ষেপ।
সরেজমিনে লাশ চুরি যাওয়া স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদীসহ কয়েকটি গ্রামে মরদেহ চুরি ঠেকাতে বেশিরভাগ কবরের ওপরে দেয়া রয়েছে লোহার গ্রিল। এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক কবরে দেয়া হয়েছে লোহার গ্রিল। গত দুই বছরে এই ইউনিয়ন থেকেই শতাধিক কঙ্কাল চুরি হয়েছে।
এসব এলাকায় সরকারি কোনো কবরস্থান নেই। তাই পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মরদেহগুলো। এসব কবরস্থানে পাহারার ব্যবস্থাও নেই। তাই চুরি হয়ে থাকে মরদেহ।
স্থানীয়রা বলছেন, একটি কবর পাকাকরাসহ কবরের ওপরে গ্রিলের খরচ পড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। ফলে বাড়তি টাকা দিয়ে এসব করতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন। আর মৃত স্বজনদের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকু ধরে রাখতেই বাড়তি খরচ করে অভিনবভাবে গ্রিল দিচ্ছেন এলাকাবাসী।
মো. রফিক বলেন, ‘আমাদের এলাকার বেশি মরদেহ চুরি হয়ে যায়। তাই আমি আমার স্ত্রীর মরদেহ বাঁচাতে লোহার গ্রিল দিয়ে পাকা করেছি। এতে আমার সন্তান ও তার নাতি নাতনিরা তাকে মনে রাখবে।’
সূর্যদীর হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমার চাচী, দাদী, দাদা ও জেঠার মরদেহ কবর থেকে আগে চুরি হওয়ায় আমার বাবার কবরস্থানে লোহার গ্রিল দিয়েছি। শুধু তার স্বজনদের মরদেহই না এমনভাবে অনেকের মরদেহ চুরি হয়েছে এই এলাকায়।’
আরেক বাসিন্দা উজ্জল বলেন, ‘আমার বাবা ও ভাই দুইজন এক বছর আগে-পিছে মারা গেছেন। পরে মরদেহ মাটি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার গ্রিলের ব্যবস্থা করে পাকা করি। এতে আমাদের সবার অনেক ব্যয় হয়েছে।’
স্থানীয় দুলাল মিয়া বলেন, ‘ফজরের নামাযের পর আমরা কয়েকজন হাঁটার সময় কবর খুঁড়া দেখতে পাই। পরে আমরা সেখানে গিয়ে দেখতে পাই যে কবরে মরদেহ নেই। আমার মনে হয়, রাতের আঁধারের কোনো এক সময় চোরেরা কবর খুঁড়ে মরদেহ চুরি করে নিয়ে যায়।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা ইমরান বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমরা তো আর এত টাকা খরচ করে গ্রিল দিতে পারি না। তাই গরিবরা আতঙ্কে থাকে। কখন মরদেহ চুরি হয়। আমাদের এখানে কোনো সরকারি কবরস্থান নাই। পারিবারিক কবরস্থানে মাটি দিতে হয়। তাই পাহারা দিতে অনেক সমস্যা হয়। আমরা সরকারের কাছে একটা সরকারি কবরস্থানের আবেদন জানাই।’
ওই এলাকার রাজমিস্ত্রি জিন্নতের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, একটা কবর পাকা করতে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। আর গ্রিল করতে আরও খরচ হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে একটা কবরে প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে।
একের পর এক শেরপুরের বিভিন্ন এলাকার কবর থেকে চুরি হচ্ছে পুরনো মরদেহ। যদিও এরই মধ্যে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ তবুও কাটছে না আতঙ্ক।
শেরপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কবর থেকে মরদেহ চুরির ঘটনায় দুটি আলাদা মামলা হয়। এরপর জেলা পুলিশের তৎপরতায় দুই কেমিক্যাল ব্যবসায়ীসহ চার চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় উদ্ধার করা হয় স্ক্রু ড্রাইভার, প্লাস, ব্যাগ। পরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আদালতে স্বীকারোক্তি দিলে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
‘এরপর থেকেই চুরি বন্ধ হয়ে যায়, তবে এখনও কিছু কিছু জায়গায় কবরের ওপরে গ্রিল দেয়া দেখা যায়। তাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’